কুরআন মাজীদ অথবা
কুরআ-ন মাজী-দ (
আরবি:
القرآن
আল্-কুর্'আন্[টী১])
ইসলাম ধর্মের পবিত্র
ধর্মগ্রন্থ।
[১] ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবী
মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। ইসলামের অনুসারীরা কুরআনকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে বিশ্বাস করে। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি
সূরা আছে।
আয়াত বা পঙক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবর্তীর্ণ হয়।
[২][৩][৪][৫]
মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবর্তীর্ণ ধর্মীয়
গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম
বাণীবাহক
আদম
থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে
বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়।
তবে কুরআনে কোনও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামী ভাষ্যমতে কুরআন
অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরআনের
সূরা আল-হিজরের (১৫ নং সূরা), ৯ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে, এবং তা হল:
“ |
আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।[৬] |
” |
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ১১ শতকের উত্তর আফ্রিকার কুরআন.
ইরানের মাশহাদে কুরআন, যা আলি কৃর্তক লিখিত
অবশ্য এ নিয়ে সংশয় রয়েছে যে, এই শব্দটি আসলেই আরবি ভাষার মূল থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে নাকি
সিরিয়াক থেকে এসেছে। এই সংশয়টি প্রথম উত্থাপন করেন
জার্মান সেমিটিক বিশেষজ্ঞ
থিওডর নোলদেকে। তিনি
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে
Geschichte des Qorâns (কুরআনের ইতিহাস)
[৭] নামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে আরবি কুরআন শব্দটি সিরিয়াক ভাষায় ব্যবহৃত বিশেষ্য পদ ܩܪܝܢܐ
qeryānâ
(কেরিয়ানা) থেকে এসে থাকতে পারে। সিরিয়াক ভাষার এই শব্দটি আবার সিরিয়াক
ক্রিয়াপদ ܩܪܐ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে যার অর্থ পাঠ করা বা আবৃত্তি করা।
[৮] নোলদেকের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা যেতে পারে,
“ |
"পাঠ
কর" -এর মতো একটি ক্রিয়াপদ প্রাক-সেমিটীয় হতে পারে না, আমরা ধারণা করতে
পারি শব্দটি আরবিতে প্রবেশ করেছে, খুব সম্ভবত উত্তরাঞ্চলের কোনো ভাষা থেকে
... যেহেতু সিরিয়াক ভাষায় קּרא নামক ক্রিয়া এবং "কেরিয়ানা" নামীয় একটি
বিশেষ্যও রয়েছে যার অর্থ ἀνάγνωσις (পাঠ করা) এবং ἀνάγνωσμα (ভাষণ)
উভয়টিই হতে পারে, এবং উপর্যুক্ত সকল ধারণার কারণেই এই সম্ভাবনা বৃদ্ধি
পায় যে, কুরআন আরবি ভাষার নিজসৃষ্ট কোনো শব্দ নয় যার অর্থ একই রকম হতে
পারে, বরং এটি সিরিয়াক ভাষা থেকে ধার করা শব্দ হতে পারে যা fulʻān ধরণ
হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকবে।[৯] |
” |
এসম্বন্ধে সবচেয়ে আধুনিক মতগুলোর মধ্যে রয়েছে
ক্রিস্টোফ লুক্সেনবার্গ কর্তৃক প্রদত্ত মত।
[১০] লুক্সেনবার্গের মতে কুরআন প্রকৃতপক্ষে একটি সিরিয়াক ভাষার
লেকশনারি (বাইবেলের খণ্ডাংশ সম্বলিত বই) ছিল, যা পরে আরবিতে অনুদিত হয়।
উৎপত্তি
আরবি ব্যাকরণে
কুরআন শব্দটি মাসদার তথা
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি قرأ
ক্বরা'আ ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে যার অর্থ
পাঠ করা বা
আবৃত্তি করা। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
[১১] এই শব্দটির
মিটার
বা "মাসদার" (الوزن) হচ্ছে غفران তথা "গুফরান"। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত
ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, غفر নামক
ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে "ক্ষমা করা"; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা
হলো غفران, এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার
কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ
কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং আরেকটি অর্থ হচ্ছে একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ
বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
কুরআনের
সূরা আল-কিয়ামাহের (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:
“ |
অতঃপর, আমি যখন তা পাঠ করি (ক্বুরা'নাহু), তখন আপনি সেই পাঠের (কুরআ'নাহ্) অনুসরণ করুন।[১২] |
” |
No comments:
Post a Comment